বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন শরিফুল ইসলাম সজল। আন্দোলনে তাঁর বাঁ হাতের কবজিতে গুলি লাগে। এ ঘটনায় প্রথমে তিনি আশুলিয়া থানায়, পরে ধামরাই থানায় পৃথক দুটি হত্যাচেষ্টার মামলা করেন। মামলা দুটিতে ঘটনাস্থল, সময় ও বিবরণে গরমিল থাকলেও কবজিতে গুলির তথ্যে মিল রয়েছে।
তবে কবজিতে গুলি লাগার ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা করার সুযোগ নেই বলে মনে করেন আইনজ্ঞরা।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী ইশরাত হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘একই ঘটনায় পৃথক দুটি থানায় মামলা করা আইনত সংগত নয়। কারণ এতে বিচারিক প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটে। যদি প্রমাণিত হয় যে বাদী ইচ্ছা করে বিভ্রান্ত করতে একই ঘটনায় একাধিক মামলা করেছেন, তাহলে এটি ফৌজদারি দণ্ডবিধির ২১১ ধারা অনুযায়ী মিথ্যা অভিযোগ হিসেবে গণ্য হবে।
এর জন্য বাদীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। এমন আচরণ বিচারব্যবস্থার অপব্যবহার এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় হিসেবে বিবেচিত হবে।’
গত বছর ২০ অক্টোবর বাদী শরিফুল ইসলাম সজল শেখ হাসিনাসহ ৫৯ জনের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা করেন। ওই মামলায় আরো দু-তিন শ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।
প্রথম মামলার পাঁচ মাস পর চলতি বছর গত ২৮ মার্চ একই অভিযোগে বাদী শরিফুল ইসলাম সজল শেখ হাসিনাসহ ৩৪৬ জনের বিরুদ্ধে ধামরাই থানায় আরেকটি মামলা করেন। ওই মামলায় চার-পাঁচ শ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।
আশুলিয়া থানায় করা মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, গত বছর ৫ আগস্ট সকাল ১১টায় ছাত্র-জনতার সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনের পক্ষে মিছিল করার জন্য আশুলিয়া থানাধীন বাইপাইল বাজার এলাকায় যান শরিফুল ইসলাম সজল। তখন বাইপাইল মোড় ও আশপাশের সড়কে সাত-আট হাজার বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনকারী অবস্থান করছিল। তখন শেখ হাসিনাসহ অন্য আসামিদের হুকুমে অন্য আসামিদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা আগ্নেয়াস্ত্র, রামদা, হকিস্টিক, লোহার পাইপ, রড, লাঠিসোঁটা এবং দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনকারীদের ধাওয়া করে।
এ সময় সামনে যাকে পায় তাকেই এলোপাতাড়ি মারপিট ও আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে উপর্যুপরি গুলি বর্ষণ করতে থাকে। তখন বাদীসহ উপস্থিত আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। এ সময় আসামিরা গুলি করলে বাদীর বাঁ হাতের কবজির ওপরে গুলি লাগে। গুরুতর আহত হয়ে পাকা রাস্তায় পড়ে থাকলে ছাত্র-জনতা বাদীকে চিকিৎসার জন্য এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে।
ধামরাই থানায় করা মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, আহত শরিফুল ইসলাম সজল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সমর্থক। গত বছর ৫ আগস্ট সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে তিনিসহ আরো অনেক ছাত্র-জনতা ধামরাইয়ের থানা রোড তিন রাস্তার মোড়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উত্তর পাশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন। তখন শেখ হাসিনাসহ অন্য আসামিদের হুকুমে ও নির্দেশনায় অন্য ৩৪৬ আসামিসহ অজ্ঞাতনামা অন্যরা বিভিন্ন ধরনের মারাত্মক মারণাস্ত্র, রাইফেল, রিভলভার, ককটেল, ধারালো রামদা, ছুরি, চাপাতি, লোহার রডসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ছাত্র-জনতাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালায়। তাদের ওপর এলোপাতাড়ি ককটেল নিক্ষেপ ও নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। এতে তাঁর বাঁ হাতের কবজির ওপরে গুলি লাগে। তিনি মারাত্মক জখম অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকেন। পরে ছাত্র-জনতা তাঁকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
মামলায় উল্লেখ করা তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দুটি মামলায় বাদীর নাম, ঠিকানা, বয়স ও জাতীয় পরিচয়পত্রের হুবহু মিল রয়েছে। তবে এক মামলায় পিতা-মাতা দুজনের নাম উল্লেখ করলেও অন্য মামলায় শুধু পিতার নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
এসব বিষয়ে বাদী শরিফুল ইসলাম সজল বলেন, ‘গত ২৮ মার্চ আমি ধামরাই থানায় একটি মামলা করেছি। তবে আশুলিয়া থানায় কোনো মামলা করিনি। অন্য কেউ প্রতারণা করে মামলাটি করেছে। আশা করছি, বিষয়টির সমাধান হয়ে যাবে।’